শরীয়তপুর জেলার অন্তর্গত গোসাইরহাট উপজেলার পদ্মা—মেঘনা জৈয়ন্তিকার অববাহিকায় নদী বিধৌত আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি এ জনপদ। এ জনপদে অবস্থিত সরকারি শামসুর রহমান কলেজ শরীয়তপুর জেলার বৃহত্তম কলেজ। এই কলেজের ঐতিহ্য সুনাম যার অক্লান্ত শ্রম, মেধা, সততা ও সুনিপুণ হাতের ছেঁায়ায় গড়ে উঠেছে তিনি আর কেউ নন, তিনি হচ্ছেন শরীয়তপুর জেলার গোসাইারহাট উপজেলার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট শিল্পপতি জনাব আলহাজ্জ শামসুর রহমান (শাহ্জাদা মিয়া) ।
শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলায় পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার মহৎ প্রয়াসে এগিয়ে আসেন এলাকার কতিপয় শিক্ষা দরদী মানব সন্তান। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৮৪ সালের ১ জুলাই গোসাইরহাট উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে আত্মপ্রকাশ করে “ইদিলপুর মহাবিদ্যালয়”। ২.৪০ একর জমি এবং উত্তর—পূর্ব পাশ্বের ছোট একটি দ্বিতল ভবনটি নিয়ে কলেজের যাত্রা শুরু হয়। নতুন কলেজে ছাত্র—ছাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় তাদের টিউশন ফি দিয়ে শিক্ষক—কর্মচারীদের সম্পূর্ণ বেতন দেওয়া সম্ভব হতো না। লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন ভাতা বকেয়া পড়ে যায়। ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে উপজেলা পদ্ধতি বাতিল হয়ে গেলে কলেজটি দৈন্য দশায় পতিত হয়। শিক্ষক কর্মচারীগণের বকেয়া বেতন ও ভাতার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়ে এক অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এহেন পরিস্থিতিতে ১৯৯৩ সালে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে জনাব আলহাজ্জ শামসুর রহমান সাহেব সরকারি বিধি মোতাবেক এককালীন ১৫,০০০০০/— (পনের লক্ষ) টাকা কলেজ তহবিলে জমা দিলে ইদিলপুর কলেজের নাম পরিবর্তন করে তৎকালীন গভর্নিংবডির সর্বসম্মতিক্রমে কলেজের নামকরণ করেন “শামসুর রহমান কলেজ”।
এই সময়ে কলেজের ছাত্র সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ (ষাট) জন এবং সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলির ৪২ (বিয়াল্লিশ) মাসের বেতন বকেয়া ছিল। সেই মূহুর্তে এই মহৎপ্রাণ ব্যক্তি তাঁর নিজস্ব তহবিল থেকে শিক্ষকমন্ডলীর ৪২(বিয়াল্লিশ) মাসের বেতন পরিশোধ করেন। শুধু তাই নয় শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার নিমিত্তে ছাত্রÑছাত্রী বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি নিজ তহবিল থেকে দরিদ্র ছাত্র—ছাত্রীদের বেতন ও অন্যান্য ফিস পরিশোধে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন।
কলেজের শিক্ষকদের মাসিক বেতন তিনি নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে প্রেরণ করা শুরু করেন। অচিরেই কলেজে ছাত্র—ছাত্রীর সংখ্যা ঈর্ষণীয় পর্যায়ে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯৩ সালে কলেজ পরিচালনার আর্থিক দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এই এলাকার ঐতিহ্যবাহী হাটুরিয়া মিয়াবাড়ীর কৃতি সন্তান, মানব দরদী, বিদ্যোৎসাহী, দানবীর ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্জ শামসুর রহমান (শাহ্জাদা মিয়া)। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কলেজের লেখাপড়া ও অবকাঠামো উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। তিনি প্রথমেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করেন। পাশাপাশি বাণিজ্য বিভাগে শর্টহ্যান্ড ও টাইপ রাইটিং বিষয় চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কলেজটিকে দেশের বৃহত্তম স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ব্রত নিয়ে নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজ মেধা, শ্রম ও অর্থ অকাতরে বিলিয়েছেন। উল্লেখ্য এককালীন অনুদানের ১৫,০০০০০/—(পনের লক্ষ) টাকা প্রদানের পরেও জনাব আলহাজ্জ শামসুর রহমান সাহেব ২০১২ সাল পর্যন্ত শিক্ষক—কর্মচারীদের বেতন ভাতা, কলেজের দৈনন্দিন খরচ ও উন্নয়ন কাজের যাবতীয় অর্থ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রদান করেন।
তিনি বিভিন্ন সময়ে ৫ (পাঁচ) একর ৫৫.১৬শতাংশ জমি নিজের নামে ক্রয় করে কলেজে দান করেন। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে ২,৮৫,০০,০০০/— (দুই কোটি পঁচাশি লক্ষ) টাকা ব্যয়ে একটি পাঁচতলা বিশিষ্ট খলিলুর রহমান অনার্স ভবন নির্মাণ করে দেন। ইতোমধ্যে তিনি স্নাতক (পাস) স্তরে বিএ, বিএসএস, ও বিএসসি কোর্স এবং হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলা, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করেছেন। এছাড়া তাঁর উদ্যোগে প্রাণিবিদ্যা, গণিত ও মার্কেটিং বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুকরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তিনি হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স প্রথম পর্ব ও শেষ পর্ব (নিয়মিত ও প্রাইভেট) চালু করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা
শাখা এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এইচএসসি প্রোগ্রাম চালু করেছেন। যার ফলে এলাকার সকল স্তরের শিক্ষার্থীরা নিজ বাড়ীতে থেকে স্বল্প খরচে উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে কলেজে প্রায় আট হাজার পাঁচশত শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। তিনি নিজ উদ্যোগে একটি অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত “শামসুর রহমান কলেজ মসজিদ কমপ্লেক্স” নির্মাণ করেন। উক্ত মসজিদ নির্মাণ খরচ ১, ৫৪,৭৯,৫৭৯/(এক কোটি চুয়ান্ন লক্ষ ঊনআশি হাজার পাঁচশত ঊনআশি) টাকা মাত্র। গত ০৮/০৮/২০১৮ খ্রি. তারিখে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। এরপরেও তিনি নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১৮,০০০০/—(আঠার লক্ষ) টাকা ব্যয়ে সরকারি শামসুর রহমান কলেজের নামে একটি সুদৃশ্য গেইট নির্মাণ করেন।
আজ সরকারি শামসুর রহমান কলেজ জেলার বৃহত্তম বিদ্যায়তনে পরিণত হয়েছে। ছাত্র—ছাত্রীর সংখ্যা, শিক্ষার উচ্চতর স্তরে উন্নয়ন, দৃষ্টিনন্দন নয়ণাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরম্য অট্টালিকাসমূহ সব মিলিয়ে সরকারি শামসুর রহমান কলেজ আজ এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এক অনবদ্য নজির। এ সব কিছুর পেছনে যে মহান ব্যক্তির নাম আমরা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি তিনি আলহাজ্জ শামসুর রহমান (শাহ্জাদা মিয়া)।
জনাব আলহাজ্জ শামসুর রহমান ব্যক্তি জীবনে একজন সদাচারী, বিনয়ী, সাদামনের মানুষ, শিক্ষানুরাগী ও বিশিষ্ট শিল্পপতি। তিনি ও তাঁর পরিবারের সহযোগিতা ও আর্থিক আনুকুল্যে এবং সরকারি সহযোগিতায় কলেজে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন সরকারি শামসুর রহমান কলেজ ও জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম, অনার্স ভবন, বিজ্ঞান ভবন, আইসিটি ভবন, কলেজ ক্যান্টিন, ছাত্রাবাস ইত্যাদি। তিনি গরীব ও অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের বার্ষিক বৃত্তি প্রদান ও আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। বর্তমানে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়েছে। তদুপরি তিনি সার্বক্ষণিকভাবে কলেজের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। কলেজের যে কোন প্রয়োজনে তিনি উদারভাবে এগিয়ে আসেন। এভাবে তিনি এলাকার শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। আমরা কলেজ পরিবার তাঁর নিকট চিরকৃতজ্ঞ।